অর্থবছর শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই তড়িঘড়ি করে সঞ্চয়পত্র কিনতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। বছরের শুরু থেকে সঞ্চয়পত্রের চাহিদা ভাল থাকার পরও এখন অর্থবছর শেষে তা আরো বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে সঞ্চয়পত্র কেনার লাইন। ফলে সময়ক্ষেপনসহ নানান ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের। আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমতে পারে এমন আতঙ্ক থেকেই সঞ্চয়পত্র কেনার হিড়িক পড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।
সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবসা বাণিজ্যের অবস্থা ভাল নয়। শেয়ারবাজারে বরাবরের মতই আস্থাহীনতা চলছে। আর ব্যাংকে টাকা রেখে যে পরিমাণ সুদ পাওয়া যায় তার চেয়ে বেশি সুদ পাওয়া যায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে। ফলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগেই স্বস্তিদায়ক সাধারণ মানুষের কাছে। এমনকি বেশি মুনাফার লোভে কেউ কেউ ব্যাংক থেকে টাকা তুলেও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন বলেও শোনা যায়। নতুন সুদহার কার্যকর হওয়ার আগে সঞ্চয়পত্র কিনলে বর্তমানের নির্ধারিত হারেই সুদ পাবেন গ্রাহকরা।
ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে সঞ্চয়পত্র কিনতে এসেছিলেন মো. এনামুল হক। তিনি জানালেন, অর্থবছর শেষ হয়ে যাচ্ছে। সামনে বছর থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমতে পারে এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটেও অর্থমন্ত্রী সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর প্রস্তাব করতে পারেন এমন কথা শোনা যাচ্ছে। তাই স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করে সঞ্চয়পত্র কিনতে আসলাম। তবে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে সঞ্চয়পত্র কিনতে যেয়ে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, গরীব-অসহায় মানুষের আয়ের একটি অন্যতম উত্স সঞ্চয়পত্র। সুদহার কমালে সাধারণ মানুষের উপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানান তিনি।
সমপ্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর বিষয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। বাজারের ঋণের সুদের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের ঋণের ফারাকটা একটু বেশি হয়ে গেছে। তাই এটাকে রিভিউ করতে হবে। কিন্তু এর সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি যুক্ত তা বিবেচনায় নিয়েই এটাক রিভিউ করা হবে।
এদিকে চলতি বছরের শেষ দিকে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। এজন্য বিভিন্ন মহল থেকে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর বিষয়ে বলা হলেও নির্বাচনের আগে সঞ্চয়পত্রের সুদের কমালে জনঅসন্তুষ্টি সৃষ্টি হতে পারে। তাই সরকার সে পথে হাঁটবে না বলেই অনেকে মনে করছেন।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে মোট বিনিয়োগ এসেছে ৬৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা পরিশোধে সরকারের ব্যয় হয়েছে ২৬ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে কেবল মুনাফা পরিশোধেই ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা। মূল ও মুনাফা বাদ দিয়ে এ খাত থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। যা চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার ৯১ দশমিক ০৫ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে ৪৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। মূল বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত; জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর মুনাফা প্রদান করে সরকার। মেয়াদপুর্তির পরে বিনিয়োগকৃত অর্থও ফেরত প্রদান করা হয়। প্রতিমাসে বিক্রি হওয়া সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে প্রাপ্ত বিনিয়োগের হিসাব থেকে আগে বিক্রি হওয়া স্কিমগুলোর মূল ও মুনাফা বাদ দিয়ে নিট ঋণ হিসাব করা হয়। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেটে নির্ধারিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
বর্তমানে সঞ্চয়পত্রগুলোর মধ্যে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। পেনশন সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তিন মাস-অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। তিন বছরমেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।